জাপানি লোককথা অবলম্বনে
পুরোনো লোকের গল্প
পাপিয়া গুহ
জেলের ছেলে ইউরাশিমা, বয়স তার বিশের কোটায়। টগবগে স্বভাব, আর সকলকে ভালোবাসার ক্ষমতায় সে প্রিয় গ্রামের সব্বার কাছে।
ইউরাশিমা, তার ছোট্ট বন্ধুর জন্য বানায় বালির ঘর, আর সাগর থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে, একটার পর একটা সাজিয়ে পথ তৈরি করে দেয় । বুড়ো ইয়ামাশিতার জন্য বন থেকে কাঠ কেটে আনে। গ্রামের শুরুতে, ছোট্ট টিলাটার ধার ঘেষে যে পথটা বেকে গেছে, ঠিক তারই পাশে ইউরাশিমার ঘর। সেখানে পথ চেয়ে বসে থাকে তার মা, কখন সারাদিনের শেষে ঝুড়ি বোঝাই মাছ নিয়ে ফেরে সে । মাছ ধরায় কিন্তু ইউরাশিমার মন নেই একটুও । তার ধূসর জালে ধরা পড়া সোনালি মাছগুলোর ছটফটানিতে ইউরাশিমার মনখারাপ হয়ে যায়। ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে আবার জলেই । তবু এটাই তার কাজ । নিরুপায় ইউরাশিমা তাই মনে মনে বারবার ক্ষমা চায় মাছ গুলোর কাছে ।
ইউরাশিমা, তার ছোট্ট বন্ধুর জন্য বানায় বালির ঘর, আর সাগর থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে, একটার পর একটা সাজিয়ে পথ তৈরি করে দেয় । বুড়ো ইয়ামাশিতার জন্য বন থেকে কাঠ কেটে আনে। গ্রামের শুরুতে, ছোট্ট টিলাটার ধার ঘেষে যে পথটা বেকে গেছে, ঠিক তারই পাশে ইউরাশিমার ঘর। সেখানে পথ চেয়ে বসে থাকে তার মা, কখন সারাদিনের শেষে ঝুড়ি বোঝাই মাছ নিয়ে ফেরে সে । মাছ ধরায় কিন্তু ইউরাশিমার মন নেই একটুও । তার ধূসর জালে ধরা পড়া সোনালি মাছগুলোর ছটফটানিতে ইউরাশিমার মনখারাপ হয়ে যায়। ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে আবার জলেই । তবু এটাই তার কাজ । নিরুপায় ইউরাশিমা তাই মনে মনে বারবার ক্ষমা চায় মাছ গুলোর কাছে ।
এভাবেই একদিন ইউরাশিমার জালে ধরা পড়ল এক কচ্ছপ। বালির ওপর উলেট পড়ে খাবি খেল কিছুক্ষণ । আর ইউরাশিমা প্রতিদিনের মতোই দয়া করে জলে ছেড়ে দিল তাকে । আসলে সেই কচ্ছপ ছিল এক ড্রাগন রাজকন্যা জলে পড়েই বেশ বদলে গেল তার । ভারী সুন্দরী এক যুবতী হয়ে ইউরাশিমার সামনে হাজির হলো তক্ষুনি । ইউরাশিমার খুব ভালো লাগল তাকে, ড্রাগন রাজকন্যাও ভালোবেসে ফেলল ইউরাশিমাকে । ইউরাশিমার হাত ধরে রাজকন্যা তাকে নিয়ে চলল তার জলের তলার রাজত্বে ।
সেখানে মস্ত বড় রাজপ্রাসাদটার দরজা জুড়ে পাহারা দিচ্ছে দুটো বিশালাকার তিমি । আর রাজপ্রাসাদ গমগম করছে জলের নীচের জীবের আনাগোনায়, রঙিন বইয়ে ইউরাশিমা যাদের ছবি দেখেছে শুধু । সবাইকে পেছনে ফেলে রাজকন্যা তাকে নিয়ে চলল প্রাসাদের ভিতর। সেখানে দক্ষিণের ঝোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন ড্রাগনরাজা। রাজকন্যার ফিরে আসার পথের দিকে তাকিয়ে। রাজকন্যাকে দেখে ভারী খুশি হলেন তিনি। আর সব শুনে ইউরাশিমাকে ভীষণ পছন্দ হলো তাঁর। মনে মনে ভাবলেন, ‘এই তো একমাত্র উপযুক্ত’, জাঁকজমকে এরপর বিয়ে হয়ে গেল ইউরাশিমা আর ড্রাগনরাজকন্যার । আর ভারীসুখে দিন কাটতে থাকল তাদের ।
তারপর হঠাৎ একদিন ইউরাশিমার মনে হলো তার বাবা-মাকে বহুদিন দেখেনি সে । মনে পড়ল তার গ্রামের কথা, ছোট্ট বাড়িটার কথা। মনে পড়ল, এখানে আসার আগে মাকে বলে আসাই হয়নি । এতকথা ভিড় করতেই ইউরাশিমার মন-খারাপ হয়ে গেল খুব । রাজকন্যাকে বলল, সে একবার যেতে চায় তার গ্রামে। মা-বাবাকে দেখে আসতে চায়। রাজকন্যা তাকে ছোট্ট এক কাঠের বাকসো দিয়ে তীর অবধি পৌঁছে দিয়ে এল । আর শপথ করিয়ে নিল, আবার জলের তলার রাজ্যে না ফিরে ইউরাশিমা এ বাকসো খুলবে না কখনো।
তীরে পৌঁছে ইউরাশিমা ছুটে চলল তার গ্রামের দিকে, কিন্তু বহু খুঁজেও তার গ্রামের চিহ্নমাত্র পেল না সে । কোথায় গেল তার গ্রাম । ইউরাশিমা চিনতে পারল ছোট টিলাটা, আর ধার ঘেষে চলে যাওয়া অাঁকাবাঁকা পথটাকে, ঠিক যার পাশে ছিল তার বাড়ি । টিলার চারদিকে ঘুরে ফিরে ইউরাশিমা খুঁজে বেড়ালো তার ছোট্ট বাড়িটাকে । তবু লাল রঙের দরজা আর হলদে রঙের বাড়ি নজরে পড়ল না একটাও । গ্রামের সকলেও যেন পাল্টে গেছে খুব। তাদের কাউকে চিনতে না পেরে একলা ইউরাশিমা বসে রইল টিলার নীচে । হঠাৎ এক বুড়োর সঙ্গে দেখা । প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ইউরাশিমা জানতে চাইল সেই গ্রামের নাম, আর পরিচিত সক্কলের কথা । তার বাবা-মা, তাদের ছোট্ট বাড়িটা এসব কোথায় গেল ? বুড়ো ভীষণ অবাক হলো তার কথা শুনে। বলল, ও নামে এক জেলে ছিল আজ থেকে চারশো বছর আগে । তাদের ছেলে ইউরাশিমা একদিন সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। ইউরাশিমা কাঁদতে কাঁদতে সাগরের কাছে ফিরে চলল। বালির ওপর বসে অনেক পুরোনো কথা ভাবল, আর বুঝল, সাগরের ওপরের সময়ের সাথে, নীচের সময়ের মিল নেই কোত্থাও । হয়তো রাজকন্যার দেওয়া কাঠের বাকসোটা সময়ের এ গন্ডগোলের কিছুটা সমাধান করতে পারে। এই ভেবে, ইউরাশিমা খুলে ফেলল লাল নীল পাথর আর ঝকঝকে ঝিনুক বসানো বাদামি কাঠের বাকসোটা । বছর গুলো যেন বেরিয়ে এল বাকসোর ভিতর থেকে । ইউরাশিমার কাঁচা চুল এক্কেবারে শাদা হয়ে গেল । চামড়া কুচকে তার মুখটা হঠাৎ ঝুলে পড়ল মুহূর্তে। চোখের আলোও কমে এল, আর তক্ষুনি পুরোনো বছরগুলো যেন জাপটে ধরল তাকে ।
পরদিন সকালে, গ্রামের সকলে এক বৃদ্ধ মানুষের প্রাণহীন দেহ খুঁজে পেল, বালির উপর, সমুদ্রের ধারে ।
No comments:
Post a Comment